
জুগিরকান্দি মায়াবন (Jugirkandi Mayabon), যা স্থানীয়ভাবে “মায়াবন” নামে পরিচিত, বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বিস্ময়কর জলাবন। মায়াবনের চারদিকের অথই পানিতে সারি সারি গাছের বিশাল এক জঙ্গল। উত্তরে রয়েছে সারি ও পিয়াইন নদীর মিলনস্থল। প্রায় এক হাজার একর ভূমি জুড়ে বিস্তৃত এই বনটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাবনগুলোর মধ্যে একটি এবং রাতারগুলের চেয়ে আয়তনে প্রায় তিনগুণ বড় এই বন।
ভ্রমণের সেরা সময়
জুগিরকান্দি মায়াবন ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) সেরা সময়, কারণ এই সময়ে বনটি পানিতে ভরে যায় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। তবে, শীতকালেও (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণ করা যায়, যদিও তখন পানির পরিমাণ কম থাকে।
জুগিরকান্দি মায়াবনের প্রকৃতি ও প্রাণিবৈচিত্র্য
মায়াবনের সৌন্দর্য যেন রূপকথার গল্প থেকে উঠে আসা কোনো দৃশ্য। জলের উপর ভাসমান হিজল, জাম, বরুণ, করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি এই বনকে এক অনন্য রূপ দিয়েছে। বনের গভীরে সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না, যা এক রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
বনের পশ্চিম দিকে রয়েছে হিদাইরখাল (সরকারি নথিপত্রে বাউলিখাল) নামে একটি নদী, যার তীরে বনবিভাগের মালিকানাধীন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় মূর্তা বাগান। জুগিরকান্দি মায়াবন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এখানে দেখা যায় মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ডাহুক, ঘুঘু, দোয়েল, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালী, মেছোবাঘ এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে সিলেট
বাসে: ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া এসি বাসের জন্য ১৫০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের জন্য ৭০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস এবং কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,৩৩৮ টাকা পর্যন্ত।
সিলেট থেকে জুগিরকান্দি মায়াবন
সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়ক ধরে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার গেলে বেখরা ব্রিজে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে বেখরা খাল দিয়ে ছোট নৌকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে গেলে জুগিরকান্দি মায়াবনে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে, যেমন হোটেল স্টার প্যাসিফিক, হোটেল হিলটাউন, হোটেল রোজ ভিউ ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ সিলেটের হোটেল ও রিসোর্ট গাইড
কোথায় খাবেন
সিলেট শহরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খাবার পাওয়া যায়। বিখ্যাত স্থানীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে সাত রঙের চা, শুঁটকি ভর্তা, তাজা মাছের তরকারি ইত্যাদি। শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনে সাত রঙের চা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ভ্রমণ পরামর্শ
- নৌকায় ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
- প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
- বনের কোনো অংশে আবর্জনা ফেলবেন না।
- স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিন, যাতে ভ্রমণ আরও নিরাপদ ও সহজ হয়।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

0 মন্তব্যসমূহ