
আদমপুর বন (Adampur Forest Beat), যা কাউয়ারগলা বন নামেও পরিচিত। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি বিট। প্রায় ১৩,০৮০ একর আয়তনের এই বনটি রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চারটি বিটের মধ্যে সবচেয়ে বড়। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা ঘেঁষে এই বনটির অবস্থান।
আদমপুর বন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং নির্জন পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য
আদমপুর বন উঁচু-নিচু টিলায় ভরপুর, যেখানে বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে হাঁটার পথ রয়েছে। বনের উল্লেখযোগ্য গাছ-গাছালির মধ্যে চাপালিশ, শাল, গর্জন, চম্পাফুল, জারুল, মিউজিরি, চাউ, ঝাউ, করই, আগর, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, বাজনা, নাগেশ্বর, বকুল, হিজল, ডুমুর, বাঁশ ও বেত অন্যতম। বনের ভেতরে মুলি, মিটিঙ্গা, ডলু, রূপাই সহ নানা প্রজাতির বাঁশের মহাল দেখা যায়। এছাড়া, চাপালিশ, শাল, গর্জন, চম্পাফুল, জারুলসহ নানা প্রকার উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি এই বনে রয়েছে।
আদমপুর বনে পশুপাখির মধ্যে বানরের আধিক্য থাকলেও চশমা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, শিয়াল, বানর, খেঁকশিয়াল, খরগোশ, সিভিট, বনমোরগ, মথুরা, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ, টিয়া, ঘুঘু, হরিদাস, সাত ভাই চম্পা পাখির মতো বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। সীমান্তবর্তী এই বনের পাশেই রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, আর সীমানা পার হলেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আদমপুর বন যেতে ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৭৫ থেকে ৯৯৮ টাকা। ট্রেনে কমলগঞ্জ এর ভানুগাছ রেল স্টেশনে নামতে হবে।
বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ থেকে ৫৭০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি/নন এসি বাস পাওয়া যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে আদমপুর বন। কমলগঞ্জ থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় যেতে পারবেন আদমপুর বন। চালককে কাউয়ার গলা বিট অফিসের কথা বললেই আদমপুর বনে নিয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়
কোথায় খাবেন
কমলগঞ্জে সাধারণ মানের বাঙ্গালী খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে অবস্থিত গ্র্যান্ড তাজ, হাবিব হোটেল, কুটুম বাড়ী ও শ্রীমঙ্গল ইনের খাবার বেশ জনপ্রিয়। সুযোগ থাকলে শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনের জনপ্রিয় সেভেন লেয়ার চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন
আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বনবিভাগের পরিদর্শন বাংলো। সিলেট বনবিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে এ বাংলোতে রাতে থাকা যায়। এছারা রাতে থাকতে চাইলে মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রিযাপন সবচেয়ে ভালো। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে হোটেল মেরিনা, টি হাউজ রেস্ট হাউজ, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, আমাজন ফরেস্ট রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট ও শান্তি বাড়ি অন্যতম।
মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান
মৌলভীবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বাইক্কা বিল, চা জাদুঘর, মাধবকুন্ড ও হামহাম জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

0 মন্তব্যসমূহ